নিজস্ব প্রতিবেদক: হাটহাজারীতে একটি তিনতলা বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে নিচে পড়ে গিয়ে আবদুল ছবুর (৩৬) নামের এক বাকপ্রতিবন্ধী যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার (৪ মে) উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডস্থ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং গেইটের পূর্ব পাশে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আবদুস ছবুর মেখল ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডস্থ জাহাঙ্গীর মেম্বার বাড়ির মৃত আবদুস সালামের পুত্র। তিনি দুই সন্তানের জনক।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে উল্লেখিত এলাকার বিসমিল্লাহ ভবনের তৃতীয় তলার ছাঁদ থেকে পাশের সেমিপাকা ঘরের টিনের চালে এবং পরে মাটিতে পড়ে গুরুতর আহত হয় সবুর। ঘটনার পর পর বাড়ির মালিকের ভাতিজা তারেকসহ কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় পথেই তার মৃত্যু হয়। পরে খবর পেয়ে হাটহাজারী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক সোহেল রানা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। নিহতের বাড়ীর আশে পাশের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, শুত্রবার দুপুরে বড়পীড় পাড়া এলাকায় একটি মেজবানের দাওয়াত খেয়ে কাজে চলে যায় সে । পরে রাত ১০টার দিকে তার মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
নিহতের বড় ভাই মাবুদ জানান, গত কয়েকদিন ধরে অভিমান করে সবুর ঘরে খাবার খাচ্ছিলো না, না খেয়ে কাজে যাওয়ায় সিড়ি দিয়ে উঠার সময় মাথা ঘুরে নিচে পড়ে গিয়ে দূর্ঘটনার শিকার হলে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ঘটনার দিন রাতে মেখল ৯ নং ওয়ার্ড মেম্বার নেজাম উদ্দিনসহ মালিকের বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে আপোষ মিমাংসা করা হয়।
এ ব্যাপারে বিসমিল্লাহ ভবনের মালিক জাফরের সাথে কথা বলতে চাইলে তার ভাতিজা তারেক জানান, চাচা অসুস্থতার কারনে চিকিৎসা নিতে ইন্ডিয়া গেছেন। পরে তিনি জানান, প্রতিবন্ধী ছবুর প্রায় সময় আমাদের বিল্ডিংয়ে কাজ কর্ম করতো। তবে গতকাল কেনো আসছিলো তা জানিনা। ছাদে গেছে সেটাও জানতাম না। তারেকের ছোট ভাই জানান, সবুর বিল্ডিং থেকে পড়েনি। পাশের টিনশেড ঘরের চালা থেকে পড়ে মারা গেছে। এদিকে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে গতকাল রাত থেকে দফায় দফায় বিল্ডিংয়ের মালিকের বাসায় বৈঠক হয় এবং তিন লক্ষ টাকায় বিষয়টি আপোষ মিমাংসা হয় বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে মেখল ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নং ওয়ার্ড মেম্বার নেজাম উদ্দীনের মুঠোফোনে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত একাধিকবার রিং দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ফতেপুর ইউপির ৫ নং ওয়ার্ড মেম্বার হামিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, এ ঘটনায় একটি মৌখিক আপোষনামা হয়েছে এবং নিহতের পরিবারকে ৭০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক সোহেল রানা জানান, বাকপ্রতিবন্ধী ওই যুবক ছাঁদ থেকে পড়ে মারা গেছে বলে জেনেছি। তবে সে ছাঁদে কেনো গেলো কিভাবে পড়ে গেলো বিষয়টি আমার মাথায় আসছেনা। তবে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে আসলে আসল ঘটনা জানা যাবে বলেও জানান তিনি।
মেখল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন চৌধুরী জানান, ছাঁদ থেকে পড়ে এক যুবক মারা গেছে বলে খবর পেয়েছি। তবে বিস্তারিত কিছু জানি না।
ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জায়নুল আবেদীন দৈনিক হাটহাজারী নিউজকে বলেন, যুবকের মৃত্যুর খবর শুনেছি। তবে কেন এমন ঘটনা ঘটেছে তা জানি না।
হাটহাজারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুজ্জামান শনিবার সন্ধ্যা ৭ টার দিকে গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, এ ঘটনায় নিহতের বোন বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন।